নতুন বাংলাদেশ গঠনে ইসলাম-ই হোক রাষ্ট্রচেতনা! (বার্ষিক কর্মী সম্মেলন ২০২৫)

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ঢাকা ১২ই জুলাই শনিবার : অদ্য সকাল ৯-টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত ঢাকার রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে ‘যুবসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত আহবান জানান।

তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল ইসলাম। সেই চেতনার উপরেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। নইলে একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা হারিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এদেশের প্রকৃত শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কিংবা গণতন্ত্র নয়, বরং ইসলামী খেলাফতের রাজনীতিই হ’তে পারে একমাত্র বিকল্প। এ লক্ষ্যে সকল ইসলামী দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামী খেলাফতের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করার জন্য তিনি জোরালো আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, ‘যুবসংঘ’ এদেশের শান্তিপ্রিয় যুব সংগঠন। তারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে এদেশে দাওয়াতী কার্যক্রম জোরালোভাবে চালিয়ে যাবে এটাই আমাদের কামনা।

‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মাদ বাহারুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, যুববিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল হাই, শূরা সদস্য মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক মাওলানা জালালুদ্দীন (কুমিল্লা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি হাফেয আব্দুল মতীন, ‘আহলেহাদীছ পেশাজীবী ফোরামে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মাদ ছাবিত, ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক রবীউল ইসলাম এবং ‘আল-‘আওন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ড. মুখতারুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্মেলনের একপর্যায়ে তুরস্ক ভিত্তিক সমাজকল্যাণ সংস্থা জমঈয়াতুত তাকাফুল লি আয়তামি ফিলিস্তীন-এর ডাইরেক্টর লেবাননী বংশদ্ভূত ড. দানিয়েল হাসান বাছবূছ আগমন করেন এবং ফিলিস্তীনের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করেন। এসময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপক ফিলিস্তীনী বংশদ্ভূত জনাব হুসামুদ্দীন এদান এবং লন্ডনস্থ মানবাধিকার সংস্থা কেজ ফাউন্ডেশন-এর ব্যবস্থাপক জনাব মুহাম্মাদ রববানী। তাঁরা ফিলিস্তীনে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সাথে মতবিনিময়ের জন্য বাংলাদেশ সফররত ছিলেন। এছাড়া সম্মেলনে পিস টিভির আলোচক, বায়তুল মা‘মূর মসজিদ, ঢাকার সম্মানিত খতীব জনাব হাসান জামিল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আগমন করেন।

এতদ্ব্যতীত ‘যুবসংঘ’-এর বর্তমান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবুল কালাম, অর্থ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল-গালিব, প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুর রঊফ, ঢাকা-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি ড. ইহসান ইলাহী যহীর, বরিশাল যেলা সভাপতি কায়েদ মাহমূদ ইমরান, টাঙ্গাইল যেলা সভাপতি আব্দুল হামীদ, গাযীপুর-উত্তর যেলা সভাপতি শরীফুল ইসলাম, খুলনা যেলা সভাপতি আল-আমীন, রংপুর-পশ্চিম যেলা সভাপতি মুতীউর রহমান, দিনাজপুর-পশ্চিম যেলা সভাপতি মীযানুর রহমান, সিলেট যেলা সভাপতি তোফায়েল আহমাদ, জামালপুর-উত্তর সাংগঠনিক যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর-এর শিক্ষার্থী ‘যুবসংঘে’র কর্মী মুহাম্মাদ মুমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আকরাম হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মুদ্দাছি্ছর ছাকিব প্রমুখ বক্তব্য পেশ করেন। সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফায়ছাল মাহমূদ। অতঃপর উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম।

সকাল ৯-টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ ও নারায়ণগঞ্জ যেলার ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হাফেয ওমর ফারূক। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর পরিচালক রাক্বীবুল ইসলাম (মেহেরপুর), সদস্য মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), ইয়াকূব আলী (মেহেরপুর), কেরামত আলী (পাবনা), মীর বখতিয়ার (যশোর)। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমাদুল্লাহ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ও দফতর সম্পাদক আরাফাত যামান।

এতদ্ব্যতীত বিভিন্ন যেলা থেকে আগত ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণও উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে সম্মেলনের সভাপতি কর্তৃক মজলিস ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে মাগরিবের প্রাক্কালে সম্মেলন সমাপ্ত হয়।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :

সম্মেলনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা সমূহ পেশ করা হয়। ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফায়ছাল মাহমূদ প্রস্তাবনা পাঠ করেন ও উপস্থিত সকলে তা সমর্থন করেন।-

১. জুলাই’২৪-এর অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে পুনর্গঠন করতে হবে।

২. বৃটিশদের চালুকৃত বিচারব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে এবং বিচারের নামে অবিচার, দীর্ঘসূত্রিতা, আইনের অপব্যবহার ও পক্ষপাতিত্ব থেকে আদালত ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে অবিলম্বে শারঈ বিচারব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৩. এই সম্মেলন সম্প্রতি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দলীয় রাজনীতির নির্মম শিকার সকল হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সেই সাথে পশ্চিমাদের চালানকৃত শিরকী গণতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী জানাচ্ছে।

৪. প্রাথমিক হ’তে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের বর্তমান সিলেবাস সংস্কার করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৫. শিক্ষার সকল স্তরে প্রচলিত সহশিক্ষা বাতিল করতে হবে এবং নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. কোটা প্রথার পরিবর্তে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলকে সমানভাবে দেশ সেবার সুযোগ দিতে হবে।

৭. অফিস-আদালত থেকে ঘুষ ও দুর্নীতি কঠিন হস্তে দমন করতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ বিভাগ সৃষ্টি করতে হবে।

৮. অসাধু সিন্ডিকেট ও খাদ্যে ভেজাল প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৯. যুবসমাজকে বিদেশমুখী না করে দেশেই উত্তম কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

১০. বিনোদন ও সংস্কৃতির নামে দেশে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার অবাধ প্রসার বন্ধ করতে হবে এবং শহর ও গ্রামের সর্বত্র মদ, জুয়া, চাঁদাবাজী এবং লটারী প্রভৃতি সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১. ইসলামের নামে প্রচলিত বিভ্রান্ত দলসমূহ যেমন আহলে কুরআন, কাদিয়ানী, হিজবুত তাওহীদ, হিজবুত তাহরীর, দেওয়ানবাগী প্রভৃতি ফের্কার প্রতিরোধে সরকারীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১২. এই সম্মেলন সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইস্রাঈলের পাশবিক আগ্রাসনের শিকার অসহায় ফিলিস্তীনী মুসলমানদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ সরকারকে সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে ইস্রাঈলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানাচ্ছে।

সম্মেলনের অন্যান্য খবর :

কর্মী উপস্থিতি : দেশের সকল যেলা থেকে প্রায় দেড় হাযার কর্মী ও সুধী উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মূল অডিটোরিয়ামে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরে চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়।

স্টল সমূহ : সম্মেলনে সকাল ৯-টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত মিলনায়তনের বাইরে মূল গেইটের ডান পার্শ্বে ‘আল-‘আওন’-এর কেন্দ্রীয় উদ্যোগে ব্লাড গ্রুপিং ও রক্তদাতা সদস্য সংগ্রহ ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ক্যাম্পিং পরিচালনা করেন ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ যেলার দায়িত্বশীলবৃন্দ। উক্ত ক্যাম্পিংয়ে ৩৮ জনের ব্লাড গ্রুপিং ও ৪৫ জন রক্তদাতা সদস্য বা ‘ডোনর’ তালিকাভুক্ত হন।

এছাড়াও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’, বিক্রয় বিভাগের জন্য বুকস্টল ও ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় উদ্যোগে সংগঠনের পরিচিতি বিষয়ক স্টল স্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বই, সংগঠনের পরিচিতি, গঠনতন্ত্র, মনোগ্রাম সম্বলিত গেঞ্জি, চাবির রিং, কলম ও প্যাড ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হয়।