ইসলাম ও কুফর কখনোই এক নয়। মসজিদ ও মন্দির কখনোই এক নয়। মসজিদে হিন্দু ঢুকলে যেমন মুসলমানরা বিব্রত হয়, মন্দিরে কোন মুসলিম ঢুকলে হিন্দুরাও তেমনি বিব্রত হয়। বিশেষ করে যদি তিনি টুপি-দাড়িওয়ালা মুসলমান হন। মসজিদে আযানের সময় বা ঈদের ময়দানে মুসলমানদের তাকবীর ধ্বনির সময় যদি হিন্দুরা সম্প্রীতির নামে সেখানে গিয়ে উলু ধ্বনি করে, তাহ’লে সেটা কেউ মানতে পারে কি? যদি কেউ রাজনীতির নামে এটাকে স্বাগত জানান, তাহ’লে বুঝতে হবে যে, তার মধ্যে ঈমানী মর্যাদাবোধ নেই।
দেড় হাযার বছর পূর্বে মক্কার মুশরিক নেতারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে সম্প্রীতির নামে এক আপোষ প্রস্তাব নিয়ে এসে বলেছিল, ‘হে মুহাম্মাদ! এসো আমরা ইবাদত করি, যার তুমি ইবাদত কর এবং তুমি ইবাদত কর, যার আমরা ইবাদত করি। তাতে আমরা ও তুমি আমাদের উপাসনার কাজে পরস্পরে শরীক হব’। তখন আল্লাহ সূরা কাফেরূন নাযিল করেন (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৪র্থ মুদ্রণ ১৬৭ পৃ.)। যাতে কাফেরদের সঙ্গে পুরাপুরি বিচ্ছেদ ঘোষণা করা হয়। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ইবলীসের জন্য এই সূরার চাইতে অধিক ক্রোধ উদ্দীপক কোন সূরা কুরআনে নেই। কেননা এর মধ্যে রয়েছে তাওহীদ ও শিরকের আপোষহীনতার ঘোষণা (কুরতুবী)।
সেদিন মক্কার নেতাদের আপোষ প্রস্তাবের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন, ‘আপনারা কি এই সূর্যকে দেখছেন? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি আপনাদের কারণে আমার তাওহীদের দাওয়াত পরিত্যাগ করব না। যতক্ষণ না আপনারা ঐ সূর্য থেকে আমার জন্য একটা স্ফুলিঙ্গ এনে দিবেন’। তখন আবু তালিব বললেন, আমার ভাতিজা কখনোই আমাদেরকে মিথ্যা বলে না। অতএব তোমরা ফিরে যাও’ (ছহীহাহ হা/৯২)।
সেযুগের মুশরিক নেতাদের আপোষ প্রস্তাবের ন্যায় এযুগেও চলছে আপোষ প্রস্তাবের হিড়িক। বিদেশের লেজুড়বৃত্তিতে অভ্যস্ত এদেশের নীতিহীন মুসলিম রাজনীতিকরা হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মন্ডপে গিয়ে সম্প্রীতির দাওয়াত দিচ্ছেন। বলছেন, ‘রোযা ও পূজা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’। ‘দুর্গা, মূসা ও ঈসা স্ব স্ব যুগের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ ছিলেন’। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন টাকার নোটে ছাপা হয়েছে মসজিদ, মন্দির ও বৌদ্ধবিহারের ছবি। বুঝানো হচ্ছে, সব ধর্মই সঠিক। অথচ আল্লাহ বলছেন, একমাত্র ইসলামই আমার মনোনীত ধর্ম (আলে ইমরান ৩/১৯)। এর বাইরে যারা অন্য ধর্ম তালাশ করবে, তা গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে (আলে ইমরান ৩/৮৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের পর কা‘বাগৃহে পূজিত মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর ধুয়ে-মুছে ছাফ করে সেখানে আল্লাহর নামে তাকবীর দিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেছিলেন। সেদিন তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করে বলেছিলেন, ‘সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিদূরিত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিদূরিত হয়েই থাকে’ (ইসরা-মাক্কী ১৭/৮১)। অতঃপর বিভিন্ন স্থানে থাকা মুশরিকদের প্রধান তিনটি উপাস্য মানাত, হোবল ও উযযার মূর্তিগুলিকে সেনা পাঠিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী নওমুসলিম আবু সুফিয়ানকে তিনি ৯০ কি.মি. দূরে ত্বায়েফে পূজিত ‘লাত’ মূর্তিকে ধ্বংস করার জন্য পাঠান। অতঃপর তিনি মুগীরাহ বিন শো‘বার সহযোগিতায় সেটিকে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেন। তিনি ত্বায়েফবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেন। যাদের নেতারা ইতিপূর্বে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করে এসেছিল। অথচ এই আবু সুফিয়ান মুশরিক থাকাকালে মদীনায় গেলে তার কন্যা উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবীবা তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর বিছানায় বসতে দেননি। কেননা আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক’ (তওবা ৯/২৮)। অর্থাৎ তাদের হৃদয় নাপাক। তাই নাপাকীর অনুসারীদের প্রতি কোন সম্মান নেই। অথচ আজ বাংলাদেশের সর্বত্র কবর পূজা, মিনার পূজা, অগ্নি পূজা, সৌধ পূজা ও ওরস পূজার শিরকে সয়লাব। শুধু তাই নয়, তারাই এখন ধর্মীয় নেতা ও দেশের নেতা হিসাবে বরিত।
৯২ শতাংশ মুসলিমের দেশে যেখানে ইসলাম বিজয়ী, সেই দেশের মুসলিম নেতারা পূজা মন্ডপে গিয়ে সম্প্রীতির বাণী শুনাচেছন। উচিত ছিল তাদেরকে শিরক পরিত্যাগ করে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত বিশ্বাসের প্রতি আহবান জানানো। অথবা উচিত ছিল এসব স্থানে আদৌ না যাওয়া। তাদের মন্দিরে যাওয়ার দৃশ্য যেমন ভিডিও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, তেমনি আল্লাহর ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে। ক্বিয়ামতের দিন এই দৃশ্য দেখিয়েই আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।
উল্লেখ্য যে, কথিত রাম ও দুর্গা বলে ইতিহাসে কিছু নেই। ২০১৯ সালের ৯ই নভেম্বর যখন অযোধ্যার বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট রায় দিল, তখন সে দেশের অন্ধ্র প্রদেশের অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় কলিকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখায় বলেছিলেন, ৫০০ বছর ধরে একটা মসজিদ তার স্থানে দাঁড়িয়েছিল। যাকে বর্বরদের মত ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হ’ল। অতঃপর সুপ্রীম কোর্ট সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিল। অথচ রাম কেবল মহাকাব্যে আছেন। তিনি আদৌ ছিলেন কি-না, তিনি কোথায় জন্মেছিলেন, সেসবের কোন প্রামাণ্য নথি নেই’। অনুরূপভাবে ‘দুর্গা’ একটি ভিত্তিহীন বিশ্বাস মাত্র। হিন্দুদের ঋগ্বেদে যার কোন উল্লেখ নেই। অথচ হিন্দু সমাজের মূল বিশ্বাসে একেশ্বরবাদ ছিল। অথর্ব বেদে অল্ল উপনিষদের ৫ম সূত্রে বলা হয়েছে, অল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূতং।
জানা আবশ্যক যে, ক্ষমতা আল্লাহর দান। এটি একটি বিরাট পরীক্ষা। যিনি যতটুকু ক্ষমতার মালিক, তাকে ততটুকুর জন্য আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। রাষ্ট্রনেতারা সবচেয়ে বড় দায়িত্বে আছেন। তাদের নিকটে রয়েছে এদেশের ২০ কোটি মুসলমানের আক্বীদা ও আমলের বিশাল আমানত। তাই তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন এই আমানতের হিসাব দিতে হবে। তাদেরকেই সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হ’তে হবে। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদ ও ফুলের মালা কবরে যাবে না। সেখানে মুনকার ও নাকীরের প্রশ্নের উত্তর তারা কি দিবেন সেটা ভেবে দেখার আহবান রইল- (স.স.)।