মানুষের সন্তুষ্টি বনাম আল্লাহর সন্তুষ্টি

عَنْ مُعَاوِيَةَ، أَنَّهُ كَتَبَ إِلٰى عَائِشَةَ- رَضِيَ اللهُ عَنْهَا- أَنِ اكْتُبِي إِلَيَّ كِتَابًا تُوصِينِي فِيهِ وَلَا تُكْثِرِي. فَكَتَبَتْ: سَلَامٌ عَلَيْكَ، أَمَّا بَعْدُ: فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ- صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يَقُولُ: وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَا اللهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ اللهُ مَئُونَةَ النَّاسِ، وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَا النَّاسِ بِسَخَطِ اللهِ وَكَلَهُ اللهُ إِلَى النَّاسِ-

হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখলেন, আপনি আমাকে উপদেশ দিয়ে সংক্ষিপ্ত পত্র দিন, বেশী লিখবেন না। জবাবে আয়েশা (রাঃ) লিখলেন, আপনার উপরে সালাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তার সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হন। তিনি তাকে মানুষের কবল থেকে রক্ষা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও মানুষের সন্তুষ্টি চায়, আল্লাহ তাকে মানুষের হাতে ছেড়ে দেন’।[1]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, مَنِ الْتَمَسَ رِضَى اللَّهِ بِسَخَطِ النَّاسِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَأَرْضَى عَنْهُ النَّاسَ، وَمَنْ الْتَمَسَ رِضَى النَّاسِ بِسَخَطِ اللَّهِ، سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِ، وَأَسْخَطَ عَلَيْهِ النَّاسَ- ‘যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকেও তার প্রতি সন্তুষ্ট করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও মানুষের সন্তুষ্টি চায়, তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষকেও তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন’।[2]

হাদীছটি মুমিন জীবনের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ। ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা হ’ল, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। মানুষের জীবনে প্রায়ই এমন পরিস্থিতি আসে যখন তাকে একদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং অন্যদিকে মানুষের সন্তুষ্টির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হয়। এরূপ কঠিন মুহূর্তে একজন মুমিনের সঠিক সিদ্ধান্ত কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘অন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া অর্থ, এমন ইচ্ছা পোষণ করা এবং এমন কাজ করা যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে, যদিও তা মানুষকে অসন্তুষ্ট করে। এটি হ’ল নবীগণের স্তর। এর সর্বোচ্চ স্তরটি তাঁদের মধ্যে থাকা দৃঢ় প্রত্যয়ী রাসূলগণের জন্য এবং সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। তিনি একাই সমগ্র বিশ্বের মুকাবিলা করেছেন। আল্লাহর দিকে আহবানের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করেছেন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তিনি নিকটের ও দূরের সকলের শত্রুতা সহ্য করেছেন। তিনি সর্বাবস্থায় মানুষের সন্তুষ্টির উপরে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে তিনি কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করেননি’।[3]

ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য :

হাদীছটিতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যা একে অপরের বিপরীত।

১. আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পুরস্কার :

হাদীছের প্রথম অংশে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টির ঝুঁকি নিয়েও কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। এর অর্থ হ’ল, (ক) যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশী করার জন্য কোন কাজ করে, আর তাতে যদি পৃথিবীর মানুষ অসন্তুষ্টও হয়, তবে আল্লাহ স্বয়ং সেই ব্যক্তিকে মানুষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেন। মানুষ তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ ‘আমাদের উপর দায়িত্ব হ’ল বিশ্বাসীদের সাহায্য করা’ (রূম-মাক্কী ৩০/৪৭)

(খ) আল্লাহ তাকে কেবল রক্ষাই করেন না, বরং যে মানুষগুলো তার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছিল, তাদের অন্তরকেও তার প্রতি প্রসন্ন করে দেন। একসময় তারাই তার প্রশংসা করতে শুরু করে এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। এটি আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ।

এভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাযী-খুশী করতে পারল, সে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই সফলকাম হ’ল। দুনিয়াতে সে মানুষের ভালবাসা ও সম্মান লাভ করে এবং পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ করবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন ডেকে বলেন, হে জিব্রীল! আমি অমুককে ভালবেসেছি। তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিব্রীল তাকে ভালবাসেন এবং তিনি সেটি আসমানবাসীদের বলে দেন যে, আল্লাহ অমুককে ভালবেসেছেন। অতএব তোমরা তাকে ভালবাসো। তখন আসমানবাসীরা তাকে ভালবাসে। অতঃপর তার জন্য উক্ত ভালোবাসা যমীনবাসীদের প্রতি নামিয়ে দেওয়া হয় (তখন সবাই তাকে ভালবাসে)। পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন কোন বান্দার উপরে ক্রুদ্ধ হন, তখন ডেকে বলেন, হে জিব্রীল! আমি অমুকের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছি। তুমিও তার প্রতি ক্রুদ্ধ হও। তখন জিব্রীল তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয় এবং তিনি সেটি আসমানবাসীদের বলে দেন। তখন তারা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন। অতঃপর তার জন্য উক্ত ক্রোধ যমীনবাসীদের প্রতি নামিয়ে দেওয়া হয়’।[4]

২. মানুষের সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মন্দ ফল :

হাদীছের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়, তাদের মন জয় করাকে প্রাধান্য দেয়, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তাকে মানুষের হাতেই ছেড়ে দেন এবং মানুষকে তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন।

অর্থাৎ সে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির শিকার হয়। আর সে যাদেরকে খুশী করার জন্য এত চেষ্টা করেছিল, তারাই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহ তাদের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করে দেন। ফলে সে মানুষের কাছেও অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। ফলে এরূপ ব্যক্তি দুনিয়াতে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং আখেরাতেও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়। সে উভয় জগতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহর একটি অপরিবর্তনীয় বিধান হ’ল, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর সৃষ্টির সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়, আল্লাহ সেই সৃষ্টিকেই তার উপর অসন্তুষ্ট করে দেন, যার সন্তুষ্টি সে চেয়েছিল। সে সেই সৃষ্টির দ্বারাই পরিত্যক্ত হয় এবং তার বিপদ সেই সৃষ্টির হাতেই ঘটে। ফলে যে তার প্রশংসাকারী ছিল, সেই তার নিন্দাকারীতে পরিণত হয়। অবশেষে সে না সৃষ্টির কাছ থেকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে, না তার রবের সন্তুষ্টির পুরস্কার লাভ করতে পারে। এরূপ ব্যক্তিই হ’ল সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে অক্ষম ও নির্বোধ’।[5]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,يَا رَبِيعُ، رِضَى النَّاسِ غَايَةٌ لَا تُدْرَكُ، فَعَلَيْكَ بِمَا يُصْلِحُكَ فَالْزَمْهُ. فَإِنَّهُ لَا سَبِيلَ إِلٰى رِضَاهُمْ- হে রবী‘! মানুষের সন্তুষ্টি এমন এক চূড়ান্ত লক্ষ্য যা কখনো অর্জন করা সম্ভব নয়। সুতরাং তোমার জন্য যা কল্যাণকর, তা-ই দৃঢ়ভাবে অাঁকড়ে ধরো। কেননা তাদের (সকলের) সন্তুষ্টি অর্জনের কোন উপায় নেই।[6]

আমাদের জন্য শিক্ষা ও সতর্কতা :

ইসলামের মূল ভিত্তি হ’ল তাওহীদ বা এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা। একজন মুমিনের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত এবং প্রতিটি আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত কেবলই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হ’ল, বর্তমান সমাজে মানুষকে খুশী করার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতায় নেমে বহু মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা ভুলে গিয়ে শিরক ও বিদ‘আতের মত ভয়াবহ পাপে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের জন্য উক্ত হাদীছটিতে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও সতর্কতা রয়েছে।

প্রকৃত মুসলিমের করণীয় :

উক্ত হাদীছের আলোকে একজন প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য হবে জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিকতা- সব ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, ‘এ কাজটি করলে আল্লাহ সন্তষ্ট হবেন, না অসন্তুষ্ট হবেন’। সন্তুষ্টি বুঝতে পারলেই কেবল তিনি সে কাজে অগ্রসর হবেন।

কর্মক্ষেত্রে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পর্দার বিধান মেনে চলতে গিয়ে অনেকেই হয়তো সমালোচনা করবে। কিন্তু রবের হুকুম পালন করতে মুসলিম নারী কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদকে পরোয়া করবে না।

যেকোন ইবাদত বা ভালো কাজ করার পিছনে উদ্দেশ্য থাকবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি। মানুষের প্রশংসা কুড়ানো, সমাজে ভালো হিসাবে পরিচিতি লাভ করা বা অন্য কোন দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের জন্য কোনো কাজ সে করবে না।

ন্যায়ের পথে চলতে গেলে প্রায়ই প্রভাবশালী বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অসন্তুষ্টির সম্মুখীন হ’তে হয়। এমন পরিস্থিতিতে একজন মুসলিম আল্লাহকে ভয় করে সত্যের উপর অবিচল থাকবে, মানুষকে নয়। সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, সদা সত্য কথা বলবে এবং শারঈ বিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে কোন হীনমন্যতায় ভুগবে না।

তার মধ্যে মানুষের প্রশংসা লাভের মোহ থাকবে না। সর্বদা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করবে। তাহ’লেই তো মহান প্রতিপালক নিজ দায়িত্বে মানুষের অন্তরে তার জন্য ভালোবাসা ও সম্মান তৈরি করে দেবেন।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘এটি ব্যক্তিগত ও সাধারণ অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত যে, যখনই কোন বান্দা সৃষ্টির সন্তুষ্টির উপর আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয় এবং এর বিনিময়ে আসা কষ্ট ও বোঝা বহন করে ও সেই পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ অবশ্যই সেই পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে তার জন্য নে‘মত, আনন্দ এবং সাহায্য সৃষ্টি করেন, ঠিক ততটা পরিমাণ, যতটা সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সহ্য করেছিল। ফলে তার ভয় নিরাপত্তায় পরিণত হয়, ধ্বংসের আশঙ্কা মুক্তির কারণ হয়, ক্লান্তি আরামে পরিবর্তিত হয়, বোঝা সহযোগিতায় রূপান্তরিত হয়, বিপদ নে‘মত পরিণত হয়, পরীক্ষা পুরস্কারে রূপান্তরিত হয় এবং মানুষের অসন্তুষ্টি (আল্লাহর) সন্তুষ্টিতে পরিণত হয়।[7]

সর্বদা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ বজায় রাখতে হবে :

মানুষকে অসন্তুষ্ট করবে বলতে এই নয় যে, একজন মুসলিম অসামাজিক, রূঢ় বা মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে চলবে। বরং ইসলাম উত্তম চরিত্র, সদাচরণ এবং মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। তাই তিনি মানুষের সাথে সর্বোত্তম আচরণ বজায় রাখবেন। সামাজিক দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করে যাবেন। তবে যখনই আল্লাহর বিধান এবং মানুষের ইচ্ছার মধ্যে সংঘাত দেখা দেবে, তখন কোন দ্বিধা ছাড়াই আল্লাহর বিধানকে বেছে নিবেন। আর বিনয়ের সাথে শারঈ ওযর পেশ করে নিজের অপারগতা প্রকাশ করবেন। যেমন পিতা-মাতার সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহ এই ভারসাম্য শিখিয়ে বলেন,وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ‘যদি তোমার পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। কিন্তু পার্থিব জীবনে তুমি তাদের সাথে সদ্ভাব রেখে চলবে (লোকমান ৩১/১৫)

পরিশেষে, একজন মুসলিমের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। মানুষের সন্তুষ্টি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আসে, তবে তা গ্রহণীয়। কিন্তু যেখানে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে মানুষকে খুশি করার প্রশ্ন আসে, সেখানে একজন প্রকৃত মুমিন নির্ভীকভাবে আল্লাহর পথকেই বেছে নেবে।

বস্ত্তত সর্বত্রই এই নীতি প্রযোজ্য। সাময়িকভাবে কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট হ’তে পারে, সাময়িকভাবে কিছু স্বার্থহানিও হ’তে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত সফলতা ও সম্মান তো তারই জন্য নির্ধারিত, যে তার রবের প্রতি একনিষ্ঠ থাকে। যার অভিভাবক স্বয়ং আল্লাহ হবেন, সমগ্র সৃষ্টি তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিরক, বিদ‘আত সহ যাবতীয় লোক দেখানো আমল থেকে বেঁচে থেকে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করার তাওফীক দান করুন।- আমীন!


[1]. তিরমিযী, হা/২৪১৪।

[2]. ইবনু হিববান হা/২৭৬, ছহীহুত তারগীব হা/২২৫০, সনদ ছহীহ লে গায়রিহী।

[3]. মাদারিজুস সালেকীন ২/২৮৫ পৃ.।

[4]. মুসলিম হা/২৬৩৭; বুখারী হা/৩২০৯; মিশকাত হা/৫০০৫ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়-২৫।

[5]. মাদারিজুস সালেকীন ২/২৮৬।

[6]. আবু নু‘আইম ইস্ফাহানী, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৯/১২৩।

[7]. মাদারিজুস সালেকীন ২/২৮৫।