عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّكُمْ سَتَحْرِصُونَ عَلَى الإِمَارَةِ، وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَنِعْمَ الْمُرْضِعَةُ وَبِئْسَتِ الْفَاطِمَةُ-
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘অচিরেই তোমরা নেতৃত্বের লোভী হবে। অথচ ক্বিয়ামতের দিন তা লজ্জার কারণ হবে। অতএব দুগ্ধ দায়িনী (নেতৃত্ব লাভের সূচনাকাল) কতই না মধুর। আর দুগ্ধ বিচ্ছিন্নকারিণী (অর্থাৎ তা ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা) কতই না মন্দ!’।[1]
নেতৃত্বের লোভ মানব চরিত্রের এমন এক ধ্বংসাত্মক ব্যাধি, যা কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়, বরং পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। ক্ষমতার জৌলুস বা চাকচিক্য মানুষকে এমনভাবে মোহগ্রস্ত করে রাখে যে, সে এর পেছনের কঠিন দায়িত্ব ও পরকালের ভয়াবহ জবাবদিহিতার কথা বেমালুম ভুলে যায়। অথচ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) চৌদ্দশ বছর আগেই উম্মতকে এই ব্যাধি সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি ক্ষমতা বা নেতৃত্বকে ‘দুগ্ধদানকারিণী’ এবং এর সমাপ্তিকে ‘দুগ্ধ বিচ্ছিন্নকারিণী’-এর সাথে তুলনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নেতৃত্বের সূচনাকালের মিষ্টতা এবং সমাপ্তিলগ্নের তিক্ততার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
কারণ নেতৃত্ব হারানোর সাথে সাথে সকল দায়-দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, কিন্তু কাঁধে থেকে যায় হিসাব-নিকাশের ভয়াবহতা।
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ক্ষমতা দুগ্ধদানকারী পশুতুল্য। কারণ ক্ষমতা থাকলে পদ, পদবী, সম্পদ, হুকুমজারী, নানা রকম ভোগ-বিলাসিতা ও মানসিক তৃপ্তি অর্জিত হয়। কিন্তু মৃত্যু কিংবা অন্য কোন কারণে ক্ষমতা যখন চলে যায়, তখন আর তা মোটেও সুখকর থাকে না। বিশেষত আখেরাতে যখন এজন্য নানা ভীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হ’তে হবে তখন ক্ষমতা মহাজ্বালা হয়ে দেখা দিবে।[2]
তবে নেতৃত্ব ও আনুগত্য ব্যতীত সমাজ চলেনা। আবার নেতৃত্ব কখনো চেয়ে নেওয়া যায় না। বরং আল্লাহ যাদেরকে নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, অন্যদের কর্তব্য তাকে নেতৃত্বে বসানো। তাই নেতার চাইতে নেতৃত্ব বাছাইকারীদের অধিক বিচক্ষণ হওয়া আবশ্যক। এজন্য যোগ্য মজলিসে শূরা প্রয়োজন। সত্যিকারের জ্ঞানী যারা, তারা নেতৃত্ব চেয়ে নিতে পারেন না। কারণ এর গুরু দায়িত্ব পালন করা, খুবই কঠিন কাজ। তাকে যেমন বাছাইকারীদের নিকট কৈফিয়ত দিতে হয়, তেমনি সাধারণ জনগণের নিকট কৈফিয়ত দিতে হয়। সর্বোপরি তাকে আল্লাহর নিকটে কৈফিয়ত দিতে হয়। এজন্য আব্দুর রহমান বিন সামূরাকে রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ، فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِنْ أُوتِيتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا- ‘তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা যদি তুমি সেটা চাওয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত হও, তাহ’লে তোমাকে তার দিকে সোপর্দ করা হবে। আর যদি না চেয়ে পাও, তাহ’লে তুমি সাহায্যপ্রাপ্ত হবে’।[3]
তিনি আবু মূসা আশ‘আরীকে বলেন,إِنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّي عَلَى هٰذَا الْعَمَلِ أَحَدًا سَأَلَهُ وَلاَ أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ، وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ : مَنْ أَرَادَهُ- ‘আমরা আল্লাহর কসম! এই শাসনকার্যের দায়িত্ব এমন কাউকে দেইনা, যে তা চেয়ে নেয় বা তার লোভ করে বা তার আকাংখা করে’।[4]
ইসলামী নেতৃত্বের স্বরূপ :
কুফরী নেতৃত্বের উপরে ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামী নেতৃত্বের স্বরূপ। ইসলামী নেতা সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বাধ্য। এখানে অন্যের দাসত্বের উর্ধে আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য থাকে। যেমন ৫ম হিজরীতে ইরাক বিজয়ের সময় ক্বাদেসিয়ার যুদ্ধে পারস্য বাহিনীর সেনাপতি রুস্তমের নিকট মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) রুস্তমকে বলেছিলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হ’ল,إِخْرَاجُ الْعِبَادِ مِنْ عِبَادَةِ الْعِبَادِ إِلٰى رَبِّ الْعِبَادِ- ‘মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে বের করে তাদের প্রতিপালক আল্লাহর গোলামীতে ফিরিয়ে নেওয়া’। অতঃপর তিনি বললেন, যদি আমরা আপনাদের দ্বীনে প্রবেশ করি, তাহ’লে কি আপনারা আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাবেন? মুগীরা বললেন,إِي وَاللهِ ثُمَّ لاَ نَقْرَبُ بِلاَدَكُمْ إِلاَّ فِي تِجَارَةٍ أَوْ حَاجَةٍ- ‘আল্লাহর কসম, অবশ্যই। অতঃপর আমরা আপনাদের নিকটবর্তী হব না ব্যবসা কিংবা বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া’। অতঃপর মুগীরা (রাঃ) বেরিয়ে গেলে রুস্তম পারস্য সম্রাট কিসরার নিকট যথারীতি রিপোর্ট পেশ করলেন এবং এটাও বললেন, আমি মনে করি وَاللهِ ذَهَبُوا بِمَفَاتِيحِ أَرْضِنَا- ‘আল্লাহর কসম! ওরা আমাদের মাটির চাবিগুলো নিয়ে গেল’।[5] সেটাই হয়েছিল এবং ইরাক বিজিত হয়েছিল। সেই থেকে অদ্যবধি ইরাকসহ সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যে কুফর পরাজিত এবং ইসলাম বিজয়ী হিসাবে আছে।
অতএব নেতৃত্ব ও ক্ষমতা থাকবে। কিন্তু নেতৃত্বের লোভ থাকবে না। যেমন ১৫ হিজরীতে ইয়ারমুকের যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় রাজধানী মদীনা হ’তে নবনিযুক্ত খলীফা ওমরের পক্ষ থেকে খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে পরিবর্তন করে, তার অধিনস্ত সেনাপতি আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহকে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন খালিদ তার দায়িত্ব নতুন প্রধান সেনাপতির নিকটে অর্পণ করেন। কিন্তু এ নিয়ে সেখানে কোনরূপ বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।[6]
আখেরাতে ভয়াবহ জবাবদিহিতা :
ক্বিয়ামতের দিন নেতা ও শাসকদের কঠিন হিসাবের সম্মুখীন হ’তে হবে। আবু উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ رَجُلٍ يَلِى أَمْرَ عَشَرَةٍ فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ إِلاَّ أَتَى اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مَغْلُولاً يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَدُهُ إِلَى عُنُقِهِ فَكَّهُ بِرُّهُ أَوْ أَوْبَقَهُ إِثْمُهُ ‘এমন কোন ব্যক্তি নেই যে দশ কিংবা তার বেশী লোকের উপর কর্তৃত্ব করে। কিন্তু সে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে তার গলার সাথে স্বীয় হাত বাধা অবস্থায় উপস্থিত হবে। তার নেকী তাকে মুক্ত করবে অথবা তার গোনাহ তাকে ধ্বংস করবে।[7]
আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (ছাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে) বলেন,إِنْ شِئْتُمْ أَنْبَأْتُكُمْ عَنِ الْإِمَارَةِ، قَالُوا: وَمَا هِيَ؟ قَالَ: أَوَّلُهَا مَلَامَةٌ، وثَانِيهَا نَدَامَةٌ، وثَالِثُها عَذَابٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِلاَّ مَنْ عَدَلَ- ‘তোমরা চাইলে আমি তোমাদেরকে নেতৃত্বের দায়িত্ব ও তার অবস্থা বর্ণনা করতে পারি। এ পদের প্রথমে রয়েছে তিরষ্কার। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে অনুশোচনা এবং তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে ক্বিয়ামত দিবসের মহাশাস্তি। তবে যে ইনছাফ বা ন্যায়নীতি অবলম্বন করবে সে এসব থেকে রেহাই পাবে’।[8]
মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ، إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ- ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে লোকদের উপর দায়িত্বশীল নিয়োগ করেন। অতঃপর সে তার লোকদের সাথে খেয়ানতকারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন’।[9]
নেতৃত্বের লোভ থেকে বাঁচার উপায় :
এ থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হ’ল নেতৃত্বকে আমানত মনে করা। কারণ এটি কোন ভোগের বস্ত্ত নয়, বরং এটি একটি বিরাট ‘আমানত’ বা দায়িত্ব। যেদিন আমরা বুঝতে পারব যে, ক্ষমতার প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে, তখন এর প্রতি আর লোভ থাকবে না। বরং ভয় কাজ করবে যে, ‘আমি কি এই গুরুদায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারব?। একারণেই রাসূল (ছাঃ) আবু যর গেফারীর কাঁধে হাত রেখে বলেন,يَا أَبَا ذَرٍّ، إِنَّكَ ضَعِيفٌ، وَإِنَّهَا أَمَانَةُ، وَإِنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا، وَأَدَّى الَّذِي عَلَيْهِ فِيهَا- ‘হে আবু যর! তুমি দুর্বল মানুষ। আর নেতৃত্ব এক বিশাল আমানত। এ নেতৃত্ব ক্বিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও লজ্জার কারণ হবে। অবশ্য যে হক সহকারে এটাকে গ্রহণ করে এবং এ দায়িত্ব গ্রহণের ফলে তার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে তার কথা আলাদা’।[10]
সালাফে ছালেহীনের জীবন থেকে শিক্ষা :
ইসলামের সোনালী যুগের খলীফা ও আমীরগণ দায়িত্ব নিতে চাইতেন না, বরং দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়াতেন। তাঁরা বিচারক বা শাসক হওয়ার ভয়ে ক্রন্দন করতেন। যা ছিল মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতার তীব্র অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা বুঝতেন, নেতৃত্ব প্রদর্শনের বিষয় নয়, বরং তা নিজের কাঁধে লক্ষ মানুষের বোঝা তুলে নেওয়া।
তাই তো দেখা যায়, (১) দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েও মহান খলীফা ওমর (রাঃ) দায়িত্ববোধের অস্থিরতায় বলেছিলেন,لَوْ مَاتَتْ شَاةٌ عَلَى شَطِّ الْفُرَاتِ ضَائِعَةً لَظَنَنْتُ أَنَّ اللهَ تَعَالَى سَائِلِي عَنْهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যদি ফোরাত নদীর কূলে একটি ভেড়ার বাচ্চাও হারানো অবস্থায় মারা যায়, আমার ভয় হয় যে, সেজন্যও আল্লাহ আমাকে সে বিষয়ে ক্বিয়ামতের দিন কৈফিয়তের সম্মুখীন হব’।[11]
(২) ইসলামের ৫ম খলীফা হিসাবে খ্যাত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)-কে খলীফা বানানোর পর একদিন তাঁর স্ত্রী তাঁকে জায়নামাযে বসে কাদঁতে দেখলেন। কান্নার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হায় ফাতেমা! এই উম্মতের শাসনের গুরুদায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। আমি ভাবছি এ উম্মতের ক্ষুধার্ত ও দরিদ্রের কথা। চিকিৎসাহীন অসহায় রোগীর কথা, কষ্টক্লিষ্ট বস্ত্রহীন মানুষের কথা। ভগ্নহৃদয় ইয়াতীম ও একাকী বিধবার কথা। আমি চিন্তা করছি নির্যাতিত মযলূম, আশ্রয়হীন মুসাফির, বন্দী এবং জরাজীর্ণ বৃদ্ধের কথা। আমি ভাবছি সেই পরিবারের কর্তার কথা, যার সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু আয়-উপার্জন খুবই সামান্য। এদের মতো অসংখ্য মানুষের কথা ভেবে আমি অস্থির। আমি নিশ্চিত জানি, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ আমাকে এদের সবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আর সেদিন তাদের পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়াবেন, তিনি হলেন স্বয়ং মুহাম্মাদ (ছাঃ)।
আমার ভয় হচ্ছে, রাসূল (ছাঃ)-এর সেই অভিযোগের সামনে আমার কোন ওযরই টিকবে না। নিজের এই পরিণতির কথা
ভেবে আমার নিজের ওপরেই করুণা হচ্ছে। তাই আমি কাঁদছি।[12]
(৩) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর একটি ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তৎকালীন আববাসীয় খলীফা আবু জা‘ফর আল-মানছূর ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-কে বাগদাদের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করতে চাইলে তিনি তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। খলীফা মানছূর বললেন, ‘আপনাকে বিচারকের দায়িত্ব নিতেই হবে’। ইমাম বললেন, ‘আমি এই পদের যোগ্য নই’। খলীফা রেগে বললেন, ‘আপনি মিথ্যা বলছেন!’ ইমাম জবাব দিলেন, ‘যদি আমি মিথ্যা বলে থাকি, তবে তো আমি ফাসেক। আর মিথ্যুক ব্যক্তি বিচারক হওয়ার যোগ্য নয়। আর যদি আমি সত্য বলে থাকি, তবে তো আমি নিজেই বলেছি আমি যোগ্য নই। সুতরাং কোনভাবেই আমাকে নিয়োগ দেওয়া যায় না’। এই অস্বীকৃতির কারণে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং চাবুক মারা হয়, তবুও তিনি পদ গ্রহণ করেননি।[13]
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, আমাদের পূর্বসুরী খলীফাগণ ক্ষমতা বা দায়িত্বকে ‘সুযোগ’ হিসাবে দেখতেন না, বরং ‘বিপদ’ ও বড় ধরনের ‘আমানত’ হিসাবে দেখতেন। তাঁরা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী পদমর্যাদার চেয়ে পরকালীন জবাবদিহিতার ভয়কে অধিক প্রাধান্য দিতেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নেতৃত্বের লোভ থেকে হেফাযত করুন এবং কোন দায়িত্ব অর্পিত হ’লে তা আমানতদারিতার সাথে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!
[1]. বুখারী হা/৭১৪৮; মিশকাত হা/৩৬৮১।
[2]. ফাতহুল বারী ১৩/১২৬।
[3]. বুখারী হা/৬৬২২; মুসলিম হা/১৬৫২; মিশকাত হা/৩৬৮০ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।
[4]. মুসলিম হা/১৭৩৩; বুখারী হা/৭১৪৯; মিশকাত হা/৩৬৮৩ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়-১৮, রাবী আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)।
[5]. আল-বিদায়াহ ৭/৪৩; বিস্তারিত দ্র. লেখক প্রণীত ‘ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন’ বই।
[6]. ইবনু কাছীর, আল-বেদায়াহ; ইবনু জারীর, তারীখ ত্বাবারী।
[7]. আহমাদ হা/২২৩৫৪; মিশকাত হা/৩৭১৪; ছহীহাহ হা/৩৪৯।
[8]. ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৬৭৪৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩০০।
[9]. মুসলিম হা/১৪২ ‘ঈমান’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৬৮৬।
[10]. মুসলিম হা/১৮২৫; মিশকাত হা/৩৬৮২।
[11]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৪১৫; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬২৭, সনদ হাসান।
[12]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১২/৬৯৭।
[13]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/৪০২; খত্বীব বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ ১৫/৪৪৪।